শিকলবন্দি ভাই-বোনের জীবন, টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

  রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মেঘনা মোল্লা পাড়া গ্রামে ১০ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন দুই ভাই বোন। ৩৫ বছরের জালাল মোল্লা ও তার ছোট বোন ২৭ ...


 রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মেঘনা মোল্লা পাড়া গ্রামে ১০ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন দুই ভাই বোন। ৩৫ বছরের জালাল মোল্লা ও তার ছোট বোন ২৭ বছরের হাজেরা খাতুন।

ফজাই মোল্লার ছেলে জালাল একসময় কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু বছর দশেক আগে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। অন্যদিকে, বিয়ের পর একসন্তানের মা হন হাজেরা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই একমাত্র সন্তান ডুবে মারা যায়। সন্তানের শোক সইতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারান মা হাজেরাও। এরপর ভেঙে যায় তার সংসার।

দুই ভাই-বোনের আশ্রয় হয়ে ওঠেন বৃদ্ধ মা-বাবা। সন্তানদের সুস্থ করার আশায় তারা নিয়ে যান পাবনা মানসিক হাসপাতালে। কিন্তু টাকার অভাবে মাঝপথেই থেমে যায় চিকিৎসা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মানসিক সমস্যা, অস্বাভাবিক আচরণে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবার।

অবশেষে, নিরুপায় বাবা-মা এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেন-নিজ সন্তানদের পায়ে লোহার বেড়ি ও শিকল পরিয়ে রাখতে শুরু করেন। সেই শিকলই এখন তাদের সারাদিনের সঙ্গী। অন্যদিকে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চলতে থাকে তাদের চিকিৎসা। কিন্তু একসময় এলাকাবাসীও হতাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেন। মানসিক প্রতিবন্ধীদের সুচিকিৎসায় তাদের বাবা-মা ও এলাকাবাসী এখন সরকারি সাহায্য কামনা করেন। কিন্তু শুধু ২টি প্রতিবন্ধী ভাতার কাড ছাড়া আর কোনো সাহায্য আজও জোটেনি।

বাবা মো. ফজাই মোল্লা বলেন, প্রায় ১০ বছর আগেও আমার ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। মাঠে কঠোর পরিশ্রম করত, সংসারের কাজে সাহায্য করত। হঠাৎ করেই তার মানসিক সমস্যা শুরু হয়। আমরা তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করি কিছুদিনের জন্য। কিন্তু টাকার অভাবে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে বাড়িতে নিয়ে আসতে হয় তাকে। বাড়িতে থাকলেও মাঝেমধ্যে সে নিখোঁজ হয়ে যেত এবং সবাই কে মারধর করত। তাই বাধ্য হয়ে তার পায়ে লোহার বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া আমার মেয়ের বিয়ের পর একটি সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে সন্তান আমাদের বাড়িতে এসে পানিতে পড়ে মারা যায়। সেই আঘাত সইতে না পেরে মেয়েটিও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে তারও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
মা আকিরন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে-মেয়ে দুজনই মাঝে মাঝে আমাকে খুব মারধর করে। শরীর জুড়ে কত আঘাত সইতে হয়, তা কাউকে বলা যায় না। তবুও তারা তো আমার সন্তান! সন্তানকে ফেলে আমি কোথায় যাব বলুন?

আমি রান্না করে ঘরে খাবার রেখে দিই। যখন ইচ্ছা হয়, তখন তারা খেয়ে নেয়। ক্ষুধার্ত থাকবে—এটুকু আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। যত কষ্টই দিক না কেন, মায়ের বুক তো সন্তানের জন্যই ধ্বনিত হয়।

এলাকাবাসী জানান, যদি সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাহলে এ ভাই-বোনকে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তারা একসময় স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করত, কাজ করত। এখনো সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন পেলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সকলে সরকারের কাছে বিনীত আহ্বান জানাই দয়া করে তাদের দু’জনের জন্য যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। যেন তারা সমাজে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারে, নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে।

পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম আবু দারদা বলেন, দুজন প্রতিবন্ধী ভাই-বোন ইতোমধ্যেই উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে এর বাইরেও যদি আরও সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদন পাওয়া গেলে আমরা অবশ্যই যথাসাধ্য সহায়তা করার চেষ্টা করব।

A A A A A A

Name

আন্তর্জাতিক,10,খেলাধুলা,7,চাকুরি,8,চিকিৎসা,6,জাতীয়,13,প্রযুক্তি,6,বিনোদন,9,রাজনীতি,10,শিক্ষা,8,সারাদেশ,15,
ltr
item
সর্বশেষ বার্তা: শিকলবন্দি ভাই-বোনের জীবন, টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা
শিকলবন্দি ভাই-বোনের জীবন, টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEg8gxx7ecpjmHOHltF-YvVB509XpjRwL1FafR4s4yklvpURpzQS6Z3FQSDnDfc75bF3A9YnfmU_WPZmFk4elzTmSRE6_NJPAYNIXev4lIcN6TZlmZKC3EktTkToYH2REaSfjh6AYoKkIGhFtqte-5M_PtEO-mBE5Nii2PJcCWEveCjblo--QrhofXUhQaRF=w400-h211
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEg8gxx7ecpjmHOHltF-YvVB509XpjRwL1FafR4s4yklvpURpzQS6Z3FQSDnDfc75bF3A9YnfmU_WPZmFk4elzTmSRE6_NJPAYNIXev4lIcN6TZlmZKC3EktTkToYH2REaSfjh6AYoKkIGhFtqte-5M_PtEO-mBE5Nii2PJcCWEveCjblo--QrhofXUhQaRF=s72-w400-c-h211
সর্বশেষ বার্তা
https://www.sorbosheshbarta.com/2025/08/blog-post_95.html
https://www.sorbosheshbarta.com/
https://www.sorbosheshbarta.com/
https://www.sorbosheshbarta.com/2025/08/blog-post_95.html
true
4980581482692270839
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts সব দেখুন আরও পড়ুন রিপ্লাই Cancel reply Delete By হোম PAGES POSTS সব দেখুন আপনার জন্য প্রস্তাবিত ক্যাটাগরি ARCHIVE নিউজ খুঁজুন সকল পোষ্ট Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content